vop-ad1

ভয়েস অব পটিয়াঃ নানান অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; এতে ভেঙে পড়েছে পটিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা।

অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা; পটিয়া; চট্টগ্রাম; Patiya; Chittagong; Chattogram
অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা

ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্ক: নানান অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; এতে ভেঙে পড়েছে পটিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য সহকারীদের কাছে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সেবাপ্রার্থীরা। ইউনিয়ন ভিত্তিক নিয়োগকৃত স্বাস্থ্যকর্মীদের চেনেন না স্থানীয় লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বদলে ডাক্তারদের বাসা আর ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা সেবা মিলছে টাকার বিনিময়ে। 

জানা গেছে, পটিয়ার ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র সমূহে অনেক চিকিৎসক নিয়মিত বসেন না। টিকাদান কেন্দ্রগুলোর কার্যত কোন অস্তিত্ব নেই, লোকজন চেনেন না স্বাস্থ্যকর্মীদের। 
স্থানীয়রা জানান, ১৫ দিনে কিংবা মাসে এক থেকে দুই বার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারের দেখা মেলে। তা ছাড়া তাদের দেখা পাওয়া ভার। 

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে ৬৬ টি টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কাজের (আইপিসি) দায়িত্বে আছেন ৩২ জন স্বাস্থ্য সহকারী। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অধিকাংশ লোকজন এসব টিকাদান কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য সহকারীদের চেনেন না। কোন কোন ওষুধের দোকানে টাকার বিনিময়ে সরকারী টিকা ও ওষুধসহ বিভিন্ন সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানে হাসপাতাল থেকে একটি সিন্ডিকেট সরকারী বিভিন্ন ওষুধ ও টিকা দোকানে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

আশিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবুল কাসেম জানান, ‘ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও নিয়মিত ডাক্তার পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে ডাক্তার এলেও টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ মেলে।’ 
দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নের বাসিন্দা হাসেম চৌধুরী জানান, ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার না আসার বিষয়ে টিএইচও’র কাছে বার বার অভিযোগ করার পরও কোন সুরাহা হয়নি। তারা কোন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারীকেও চেনেন না। 
জুলধা ইউনিয়নের নাজিম উদ্দিন জানান, ‘তারা কখনো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারীকে দেখেন নি। ইউনিয়নের কোথায় এবং কোন সময় টিকা দেয়া হয় বা টিকাদান কেন্দ্রটি কোথায় অবস্থিত তাও তারা জানেন না। তবে কোন কোন ফার্মেসিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন সরবরাহকৃত সরকারী টিকা ও ওষুধ পাওয়া যায়।’

উপজেলা হাসপাতালের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের সেবা প্রদান তদারকি করার জন্য চার জন পরিদর্শক (এইচআই) ও ১৩ জন সহকারী পরিদর্শক (এএইচআই) রয়েছেন। এদের অধিকাংশ কর্মকর্তা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন না। কোন কোন কর্মকর্তা মাঝে মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে গেলেও শুধুমাত্র ট্যালি খাতায় স্বাক্ষর করে নিজ বাসায় ফিরে যান। 

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হাসমত আলী জানান, ‘জরুরী বিভাগে এখন বিশ টাকার নিচে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। কেউ টাকা দিতে না পারলে তাকে অপদস্থ করা হয় এবং সুচিকিৎসা দেয়া হয় না। এছাড়া এ বিভাগের জন্য সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত হাসপাতাল সহকারীরা পদস্থ কর্মকর্তাদের বাঁধার কারণে কাজ করতে পারছে না। তারা বিনা কাজে প্রতিমাসে বেতন তুলছেন।’
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সহকারী জানান, ‘বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক ল্যাবের লোকজন জরুরী বিভাগে সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। এর মাধ্যমে তারা টাকা আদায় ও এ বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকদের মাধ্যমে নিজেদের ল্যাবের প্যাডে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা লিখিয়ে নিচ্ছেন এর মাধ্যমে প্রতি মাসে এসব ল্যাব থেকে মোটা অংকের কমিশন পাচ্ছেন। এছাড়া এ বিভাগসহ অফিস সময়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভরা তাদের ওষুধ লেখানোর জন্য ভিড় করেন। বিকাল গড়ালে জরুরী বিভাগ তাদের দখলে চলে যায়। অনেক মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ রাতভর গল্পগুজব আর নিজেদের কোম্পানির ওষুধ লেখানোর কাজ সারেন। হাসপাতালের বাইরে রাতে এসব মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভের সারি সারি মোটর সাইকেলের দেখা মেলে।’

ভুক্তভোগী ও রোগীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শিশির কুমার রায় যোগদান করার পর থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম, দুর্নীতি চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। পটিয়া হাসপাতালে ৩ টাকা এন্ট্রি ফির স্থলে ২০ টাকা, টিকা প্রদানে ১০/২০ টাকা ও রোগীদের সপ্তাহে ৩ দিন মাছ, ৩ দিন মুরগী মাংস, ১ দিন খাসীর মাংস দেয়ার নিয়ম থাকলেও প্রতিদিন সস্তা মূল্যের বয়লার মুরগী দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার থেকে মাসিক মাসোহারা নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ঠিকাদারকে এ সুযোগ করে দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের মধ্য থেকে জামাল উদ্দিন নামে এক মানবাধিকার কর্মী জানান। এ ব্যাপারে টিএইচওর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি রহস্যজনকভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো ধমক দেন।

পটিয়ার হাইদগাঁওয়ের মৃত আশরাফ আলীর পুত্র শওকত ওসমান অভিযোগ করেন, গত ২৬ জুন বিকেল ৫ টায় তার নাতনীকে জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তার কাছ থেকে ৫০ টাকা আদায় করেন। সনাক টিআইবি পটিয়ার আহবায়ক সাংবাদিক এস এম এ কে জাহাঙ্গীরের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘পটিয়া হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা অবারিত করার জন্য আমরা বার বার উদ্বুদ্ধকরণ সভা করেও সফল হতে না পারায় খুবই খারাপ লাগছে। আমরা আশা করব অবিলম্বে এ অনিয়ম দূর করে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে।’

এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টিএইচও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘লিখিত ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এসময় অভিযুক্ত ২ এন্ট্রি সহকারী তার পাশে অবস্থান করলেও তিনি নূন্যতম সৌজন্যতা বোধ থেকেও তাদেরকে অনিয়ম থেকে দূরে থাকার পরামর্শ না দিয়ে উল্টো অভিযোগকারীকে মিথ্যা বলছেন বলে ধমক দেন মর্মে ভুক্তভোগী ফজলুল হক জানান।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সরফরাজ খানের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভয়েস অব পটিয়া’কে জানান, ‘তদন্তের মাধ্যমে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পটিয়ার সাংসদ ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব সামশুল হক চৌধুরী ভয়েস অব পটিয়া’কে বলেন, ‘হাসপাতালের অনিয়মে যেই জড়িত হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সরফরাজ খান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসলে শত শত ভুক্তভোগীরা তাকে ঘেরাও করে অভিযোগ করেন, তিনি এ বিষয়ে তাদের ব্যাপারে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে ভুক্তভোগীদের আশ্বাস দেন।
Share To:

Voice of Patiya

জানাতে পারেন আপনার মন্তব্য :

0 comments so far,add yours

~ মন্তব্য নীতিমালা ~

😀 আমাদের প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা বজায় রাখার জন্য আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। আমরা আশা করি যে, কোন মন্তব্য পোস্ট করার সময় আপনারা তার অনুসরণ করবেন।

• ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃপক্ষ ভিজিটর কর্তৃক নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এমন মন্তব্যগুলো মুছে ফেলার অধিকার সংরক্ষণ করে।

• জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, চেহারা বা অক্ষমতার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি আপত্তিকর বা আক্রমণ করে এমন ভাষায় মন্তব্য করা যাবে না।

• আলোচনার বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না। কিছু বিষয় ব্যতিক্রমী হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে, তবে আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে এমন কোনো বিষয় ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃক অনুমোদন করা হবে না।

• কোনো পক্ষকে আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে এমন মন্তব্য করা যাবে না।

• বাণিজ্যিক প্রকৃতির কিংবা বিজ্ঞাপনীয় উপাদান/লিঙ্ক রয়েছে এমন মন্তব্য করা যাবে না।

• যেসব মন্তব্য স্প্যামিং বলে মনে হচ্ছে এবং একাধিক পোস্ট জুড়ে অভিন্ন মন্তব্য করলে সেগুলো মুছে ফেলা হবে।

• ঘৃণাত্মক, সহিংসতার প্ররোচনা দেয় অথবা ধর্মকে আক্রমণ করে এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না।