ভয়েস অব পটিয়াঃ চট্টগ্রাম-পটিয়া-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ৫০ বাঁক যেন এক মরণফাঁদ!
ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্কঃ চট্টগ্রাম-পটিয়া-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী নদীর শাহ্ আমানত সেতু হতে দোহাজারী শঙ্খ নদী সেতু পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ৫০ বাঁক যেন এক মরণফাঁদ!
বান্দরবান, টেকনাফ, কক্সবাজারগামী পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য চট্টগ্রাম-পটিয়া-কক্সবাজার মহাসড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। কিন্তু এ সড়কের প্রশস্ততা বৃদ্ধি না করায় শাহ্ আমানত সেতু (নতুন ব্রীজ) হতে দোহাজারী পর্যন্ত ৫০টি বাঁকের কোন সংস্কার হয়নি।
কক্সবাজার থেকে দোহাজারী সেতু পর্যন্ত সড়কটি ২ লেনের হওয়ায় এবং এর বাঁক কম থাকায় এ ১১৫ কিলোমিটার সড়কটি পাড়ি দিতে সময় লাগে মাত্র আড়াই ঘন্টা। অথচ দোহাজারী সেতু থেকে শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রীজ) চট্টগ্রাম অভিমুখ পর্যন্ত বাঁকি ৪৫ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘন্টা। এর মধ্যে পটিয়া বাস স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম যেতে প্রচুর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও সড়কের দুই পাশ ঘেষে রাস্তার উচুঁ নিচু স্থান থাকায় প্রতিনিয়ত ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনায় দিন দিন লাশের মিছিল বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পটিয়া ক্রসিং হতে মনসার টেক, বাদামতল, গৈড়লার টেক, আমজুর হাট মোড়, পটিয়া পোস্ট অফিস মোড়, আদালত গেইট মোড়, থানার মোড়, ডাকবাংলোর মোড়, কমল মুন্সির হাট মিলে ৩০টি পয়েন্টে এবং চন্দনাইশের ২০ পয়েন্টে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।
সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, পটিয়া মনসা থেকে দোহাজারী শঙ্খ সেতু পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এ সড়কে অদক্ষ চালকের দ্বারা অধিকাংশ ছোট বড় যানবাহন চলাচল করছে। এদের মধ্যে ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরও রয়েছে। প্রায় সময় দুর্ঘটনার কারণে যাত্রীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে শাহ্ আমানত সেতু থেকে পটিয়া ভেল্লাপাড়া ব্রীজ পর্যন্ত ৪ লেনের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়া পটিয়া ভেল্লাপড়া ব্রীজ হতে চন্দনাইশের শঙ্খ ব্রীজ পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি এ মহাসড়কটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ত মহাসড়ক হওয়ায় যদি এ সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করা হয় তাহলে দুর্ঘটনার হার কমে আসবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
গাড়ির চালকরা জানান, মহাসড়কের দু’পাশে অবৈধভাবে এতবেশি দোকানপাট, গাড়ির স্ট্যান্ড-গ্যারেজ গড়ে উঠেছে তা ছাড়া, সড়কটি এত বেশি আঁকাবাঁকা যে, প্রতিনিয়ত অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দেড় ঘন্টার স্থলে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
আরকান সড়ক পরিবহন ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী এ ব্যাপারে ভয়েস অব পটিয়া’কে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এতোবেশি আঁকা-বাঁকা যে, অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। দু’পাশে দোকানপাট গড়ে উঠার কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা লেগেই আছে।’
অপরদিকে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল মিয়া ভয়েস অব পটিয়া’কে জানান, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সড়কের চার লেনের কাজ শুরু হলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো ঠিক করা হবে। সড়কের ফুটপাতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন যান-বাহনের স্ট্যান্ড-গ্যারেজ ও দোকানপাট উচ্ছেদ করা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাজ বলে তিনি জানান।’
এদিকে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বেশ কটি সেতু ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। এর মধ্যে মাতামুহুরী ও সাঙ্গু সেতু ১৯৬০ সালে নির্মিত। দুটির একটি বিচ্ছিন্ন হলে কক্সবাজারের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এ বিবেচনায় সরকার অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় চারটি সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেগুলো হলো, পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতু, চন্দনাইশের বরগুনি সেতু, দোহাজারীর সাঙ্গু সেতু ও চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতু।
ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ৩০৮ কোটি টাকা অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সেতুগুলো নির্মাণে ফিজিবিলিটি স্টাডির পর ডিজাইন চূড়ান্ত করেছে। সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিশীঘ্রই চার সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হবে। ঠিকাদার নির্বাচনে তিন থেকে চার মাস লাগবে। এর দুই বছরের মধ্যে সেতুগুলো নির্মিত হবে।
কিন্তু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে বাঁকখালী নদীর উপরও একটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ সেতু রয়েছে। নতুন এই প্রকল্পে সেটিকে কেন রাখা হয়নি জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ূয়া বলেন, ‘জাইকার প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সড়কপথে সীমান্ত বাণিজ্য বাড়ানো। তাই সেখানে কক্সবাজার শহরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সড়কটি রামু হয়ে ঘুনধুম ও মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত দুই বছরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ২ শতাধিক লোক নিহত হয়েছে, আহতে হয়েছেন প্রায় ৫’শ। এ সড়কে ফিটনেস বিহীন যানবাহনের দৌরাত্মের কারণে দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক আরিফুর রহমান ভয়েস অব পটিয়া’কে জানান, ‘অদক্ষ চালক ও ফিটনেস বিহীন যানবাহনের সংখ্যা কমে আসলে দুর্ঘটনার হার কমে আসবে।’
জানাতে পারেন আপনার মন্তব্য :
0 comments so far,add yours
~ মন্তব্য নীতিমালা ~
😀 আমাদের প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা বজায় রাখার জন্য আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। আমরা আশা করি যে, কোন মন্তব্য পোস্ট করার সময় আপনারা তার অনুসরণ করবেন।
• ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃপক্ষ ভিজিটর কর্তৃক নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এমন মন্তব্যগুলো মুছে ফেলার অধিকার সংরক্ষণ করে।
• জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, চেহারা বা অক্ষমতার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি আপত্তিকর বা আক্রমণ করে এমন ভাষায় মন্তব্য করা যাবে না।
• আলোচনার বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না। কিছু বিষয় ব্যতিক্রমী হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে, তবে আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে এমন কোনো বিষয় ভয়েস অব পটিয়া কর্তৃক অনুমোদন করা হবে না।
• কোনো পক্ষকে আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে এমন মন্তব্য করা যাবে না।
• বাণিজ্যিক প্রকৃতির কিংবা বিজ্ঞাপনীয় উপাদান/লিঙ্ক রয়েছে এমন মন্তব্য করা যাবে না।
• যেসব মন্তব্য স্প্যামিং বলে মনে হচ্ছে এবং একাধিক পোস্ট জুড়ে অভিন্ন মন্তব্য করলে সেগুলো মুছে ফেলা হবে।
• ঘৃণাত্মক, সহিংসতার প্ররোচনা দেয় অথবা ধর্মকে আক্রমণ করে এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না।