শতবর্ষের ইতিহাসঃ আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় - ৫ম (শেষ) পর্ব |
শতবর্ষের ইতিহাস সিরিজ - ‘আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়’
১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব
৫ম (শেষ) পর্ব
১৯. পটিয়াতে বালক বিদ্যালয় সরকারীকরণ বিষয় না জানলে কি করে হয়?
১৯৭৯ সাল থেকে সমস্ত প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়ম মেনে দুটি স্কুল একীভূত করে এক নামে সরকারীকরণ করার জন্যে সরকারীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিলো। ১৯৮২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী তারিখে তৎকালীন পটিয়া মহকুমা প্রশাসক নাজমুল আলম ছিদ্দিকী সাহেবের সভাপতিত্বে, তাঁরই সরকারী অফিসে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ডিজি জনাব ড. হাফেজ আহমদ, ডিডি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মিসেস আর.জে.আর ছালেহা খানম, মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক জনাব মাহাবুবুল আলম, যাঁরা সকলেই প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী পদধারী ছিলেন।পটিয়ার বিখ্যাত এ দুটি স্কুল একসাথে “পটিয়া ইউনাইটেড আদর্শ আবদুস সোবহান রাহাত আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়” নামকরণ চুড়ান্ত করা হয়েছিলো এবং তা অনুমোদিত হয়েছিলো। ঐ দিন দুটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ, প্রধান শিক্ষকগণসহ অন্যান্য শিক্ষকগণও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কি যেন জটিলতার কারণে প্রজাতান্ত্রিক ঐ সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিলো।
অতঃপর উভয় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষকগণ ১৯৯২ ইংরেজীতে শিক্ষা সচিব বরাবরে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পূনঃ আবেদন পেশ করেন। তৎপ্রেক্ষিতে ৩১ অক্টোবর ১৯৯২ ইংরেজী তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষা সচিব জনাব সফিউল আলম সাহেবের সভাপতিত্বে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মুহাম্মদ যোবাদুল হক, উপসচিব (মাধ্যমিক) জনাব মুহাম্মদ আবদুল জব্বার, শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক জনাব মুহাম্মদ আবু তাহের, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব ডা. সৈয়দ আহমদ প্রমুখ কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। পটিয়া থেকে ঐ সভাতে আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জনাব হামিদুল হক, প্রধান শিক্ষক জনাব মুহাম্মদ মুসা এবং পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জনাব আমীন খাঁন উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ০২ মে ১৯৯৩ ইং তারিখে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মহোদয়কে নির্দেশমূলক চিঠি প্রেরণ করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য (ঐ সময়ে চট্টগ্রামের স্কুলগুলিও কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে ছিলো)। বিএনপি সরকার আমলে আবারো ঐ সিদ্ধান্ত আটকে থাকলো।
বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ২০১৫ সালে পূনঃ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে যে প্রত্যেক উপজেলা সদরের একটি বালক স্কুল সরকারীকরণ করা হবে। পটিয়ার সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে পটিয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে পটিয়ার সকল রাজনৈতিক দলসমূহের মূল নেতৃবর্গ, বুদ্ধিজীবিগণ, সাংবাদিকগণ, শিক্ষকগণ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগণ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাগণকে জড়ো করে ২৫ আগস্ট ২০১৫ ইং তারিখে পটিয়া ক্লাব হলে ১টি, ২৮ আগস্ট ২০১৫ ইং তারিখে উপজেলা প্রশাসনের হলরুমে ১টি এবং ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ইং পটিয়া পৌরসভা হলরুমে ১টি সভার আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। শেষ ২টি সভাতে এমপি মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব, মেয়র সাহেব, ইউএনও মহোদয়া (শেষ সভাতে), উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানগণসহ সকল পর্যায়ের ব্যক্তিত্বগণ উপস্থিত ছিলেন। শেষ সভাটি মেয়র মহোদয়ের নামে চিঠি ইস্যু করা হয়েছিলো। পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য ছিলো পটিয়ার ২টি বিখ্যাত স্কুল একীভূত করে সরকারীকরণের ১৯৮২ সালের সরকারী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং ১৯৯৩ সালের সর্বশেষ আত্মীকরণের নির্দেশ পটিয়ার মাননীয় এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে কার্যকর করা। এটা সম্ভব ছিলো, সুযোগও ছিলো কিন্তু পারা গেলো না। কিন্তু কেনো পারা গেলো না, ইতিহাস ঠিক সময়ে তাও বলে দেবে। আজকের বাস্তবতায় আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শত বছরের সফলতা ও ইতিহাসের সাক্ষ্য ও তথ্য নিয়ে, এই বিদ্যালয়টিকে সরকারীকরণ করবার সকল ধরণের আয়োজন, উপকরণ ও উপযোগিতা কানায় কানায় পূর্ণ আছে। প্রয়োজন শুধু বাস্তবায়নের উদযোগ আর প্রচেষ্টা। বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা, শিক্ষকসংখ্যা ও কর্মচারীসংখ্যা ঠিক রেখে প্রয়োজনে পরবর্তীতে ডাবল শিফটের ব্যবস্থা রেখে যদি সরকারীকরণের ব্যবস্থা নেয়া যায়, তাহলে প্রতিবছর শত শত ছেলে পটিয়াতে সরকারী বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। পটিয়াতে বালক বিদ্যালয় সরকারীকরণের দাবী ও প্রত্যাশা আজ কোন ব্যক্তির বা শুধু পটিয়াবাসীর নয়, বরং ইতিহাসের ও সত্যের।
২০. স্কুল প্রতিষ্ঠার শত বছরের ইতিহাস স্মরণের অনুষ্ঠান। ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ শুক্রবার বিদ্যালয়ের শত বছর পূর্তির উৎসব ও মহামিলন মেলা আয়োজনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রগণ বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে তাঁদের সপরিবার সদস্যগণসহ বিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। শত বছর পূর্তির এই উৎসব আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছিল আলহাজ্ব মোহাম্মদ ছোলায়মান চেয়ারম্যান, ড. রফিকুল আলম সদস্য সচিব, পটিয়া পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ-কে প্রধান সমন্বয়কারী এবং বিদ্যালয়ের অপরাপর প্রাক্তন ছাত্রগণকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে গঠিত উদযাপন পরিষদে উদ্যোগে। বাস্তবতা ছিল এই যে, সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ ‘আদা জল খেয়ে’ না নামলে, আলহাজ্ব ছোলায়মান সাহেবের নিয়মিত তাগাদা না থাকলে এবং বর্তমান মেয়র আইয়ুব বাবুল ঐ সময়ে মাননীয় মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সাহেবকে আনার দায়িত্ব না নিলে এ আয়োজন অসম্ভব হতো। তবে শতবর্ষ উদযাপনের সার্বিক আয়োজন সফল করতে বেশ কয়েকজনের ভূমিকা বিশেষ করে কবিয়াল আবু ইউসুপ, এস.এম.এ.কে জাহাঙ্গীর, এ.টি.এম নাছির উদ্দিন, আবুল কালাম বাবুল, আইয়ুব বাবুল, ফৌজুল করিম, গোফরান রানা, আলী হেসেন, মোর্শেদ নিজামী, ডা. ওয়াহিদ হাসান, ডা. সাখাওয়াৎ হিরু, ডা. আইয়ুব নবী, এডভোকেট মাহউদ্দিন, সাহাবুদ্দিন সাবু, আবুল কাশেম, শহীদুল্লাহ সাদা, মোঃ লিয়াকত, সাঈদ খোকন, মোঃ রিয়াজ সহ আরো কতেকের প্রতিদিনকার কর্ম তৎপরতা দৃশ্যমান ছিল। ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৮ মার্চ অনুষ্ঠানের দিন রাত বারোটা পর্যন্ত আমি কোনো পদে না থেকেও প্রতিদিন দুপুর বারোটা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত শতবর্ষ উদযাপন কমিটির অফিস ডিউটি করার কাজটি দ্বিধাহীনভাবে করার চেষ্টা করেছি। তবে, কোনো ধরনের আর্থিক দায়িত্ব পালন কিংবা অর্থ গ্রহণে আমার ভূমিকা নেই। বরং স্মারকগ্রন্থের বেশীরভাগ লেখাগুলোর কয়েকবার করে প্রিন্ট নেয়ার ব্যয় বহন আমার নিজ থেকে করতে হয়েছে। শতবর্ষের অনুষ্ঠানের দিন সবচেয়ে বড়ো স্মৃতিময় ডক্যুমেন্ট বা ‘স্যুভেনির’ হওয়ার কথা ছিলো, “স্মারকগ্রন্থটি”। এজন্যে, জনাব প্রফেসর আবদুল আলীম সাহেবকে আহ্বায়ক ও আলহাজ্ব আবদুর রহমান স্যার, বি.কম মুছা স্যার, স.ম ইউনুচ, অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, এস.কে.এম জাহাঙ্গীর, শহীদুল্লাহ সাদা গণকে সদস্য করে স্মারকগ্রন্থের লেখা সম্পাদনা ও বাছাই করার জন্য একটি পরিষদ গঠন করা হয়েছিলো। উক্ত লেখা বাছাই ও সম্পাদনা পরিষদ যথাযথভাবে স্মারকগ্রন্থের যাবতীয় কাজ শতবর্ষ অনুষ্ঠানের আগেই সম্পন্ন করেছিলো। কিন্তু অনুষ্টানের দুইদিন আগে হটাৎ আমাকে প্রথমে শহীদুল্লাহ সাদা এরপর সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বললেন যে, অনুষ্ঠানের দিন স্মারকগ্রন্থটি দেয়া যাবে না। দেয়া যাবে না কেনো, তা অনেক পরে জানলেও সেটা বলার সময় সুযোগ হয়ে উঠেনি। তবে, ঠিক সময়ে স্মারকগ্রন্থটি ইচ্ছা করে প্রকাশ না করায় শতবর্ষ উদযাপন পরিষদ ও সম্পাদনা পরিষদের যাবতীয় সিদ্ধান্ত, পরিশ্রম ও পরিকল্পনার প্রতি অবমাননা, অসম্মান ও অবহেলা করা হলো যে কারণে, তা হলো আর্থিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের জন্যে ‘নয় ছয়’ বলে অনেকে মনে করেছেন এবং বলেছেন।
দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যগণসহ সর্বমোট ২৫০০ জন প্রাক্তন ছাত্র শেষপর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হয়েছিলেন, তাদের দেওয়া চাঁদা, স্মারকগ্রন্থের বিজ্ঞাপণ, অনুদান ও অন্যান্য খাত থেকে কি পরিমাণ অর্থ আয় হয়েছিলো ও ব্যয় হয়েছিলো তা উদযাপন পরিষদের সভা আহ্বানের মাধ্যমে ঘোষণা করা না হওয়াতে আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণ হয়ে যাওয়ার মতো হয়েছে।
২১. আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ আয়োজনের অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হলেও অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনা নিয়ে যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছে এবং এখনো আছে। যেমন, অনুষ্ঠানে খাবার বন্টনে বিশৃংখলা, মঞ্চে একই নেতৃবর্গ বার বার আসন দখল করা, মঞ্চে বক্তাগণের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পরিবেশন করা, জোর করে মঞ্চে উঠে বক্তব্য দেয়া, সঞ্চালক সঞ্চালনার কাজ ঠিকমতো না করা ইত্যাদি। তবে, অনুষ্ঠানের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রাক্তন ছাত্রগণ তাঁদের পরিবারের সদস্যসহ ইয়ারমেট বন্ধুদেরকে নিয়ে আনন্দে মেতে ছিলেন সবাই, একেবারে অনাবিল চিত্তে। শতবর্ষের অনুষ্ঠানের দিন ইতিহাস হিসেবে স্মারকগ্রন্থটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকাশ না করা ছিলো পরিষদের চরম ব্যর্থতা। শতবর্ষ অনুষ্ঠানের প্রায় এক বছর পর অন্য আরেকটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ করা হলেও, অত্যন্ত নিন্মমানের সম্পাদনা, বাজে বাইন্ডিং, ৬০ জন রেজিস্টার্ড প্রাক্তন ছাত্রগণের ছবি না ছাপানো, শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের বিভিন্ন কমিটিতে নাম না থাকাদের নাম ঢুকানো এবং অনেকের নাম বাদ দেওয়া, সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর আবু জাফর চৌধুরী সাহেবের মতো বিখ্যাত মানুষদেরসহ অনেকের নাম ঠিকানা ভুল ছাপানোর মতো ঘটনাগুলো ছিলো স্কুলের নামের উপর কালিমা লেপন। গ্রন্থটির সম্পাদক এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নামে যে ছবিসহ বক্তব্য প্রকাশ করা হয়, একই সম্পাদক এবং ভারপ্রাপ্ত সচিব উভয়ের নিজ নাম ও ঐ ছবি নিজস্ব ব্যবসায়িক পণ্যের বিজ্ঞাপনে ছাপানোর কারণে শতবর্ষের ইতিহাসখ্যাত বিদ্যালয়ের মর্যাদা এবং শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের গৌরব যথেষ্ট ক্ষুন্ন হয়েছে বলে প্রাক্তন ছাত্ররা মনে করেছেন। সম্পাদনা পরিষদ ও লেখা বাছাই কমিটির সিদ্ধান্ত ছিলো, প্রকাশনা কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে বদিউল আলমের ছবিসহ বক্তব্য স্মারকগ্রন্থের প্রথমদিকে সদস্য সচিবের পরে থাকবে এবং সম্পাদক হিসাবে থাকবে এস.কে.এম জাহাঙ্গীর। সব পাল্টে দেয়া হয়। তবে, স্মারকগ্রন্থটিতে সকলের মোবাইল নাম্বার প্রকাশিত হওয়াতে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রগণ পরস্পর যোগাযোগ রক্ষা করা সহজ হয়েছে। শতবর্ষ অনুষ্ঠানের জন্য সংগ্রহ করা অর্থের হিসাব, শতবর্ষ অনুষ্ঠানের কার্যক্রমের ভুল ত্রুটি বা সফলতা, স্মারকগ্রন্থ কেনো অনুষ্ঠানের দিন প্রকাশ করা হলো না, স্মারকগ্রন্থ একবছর পরে কেনো প্রকাশ করা হলো, গ্রন্থের অন্যান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে মূল্যায়ন, সভা আহ্বানের দায়িত্ব প্রধানত সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ সাহেবের উপর থাকলেও, তিনি তা করতে না পারায় কুমন্তব্যও হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে, অধ্যাপক হারুন সাহেব যাবতীয় অর্থ জমা দিয়েছিলেন মেরিট কম্পিউটারের শহীদুল্লাহ সাদার হাতে, যা ছিলো আমার ব্যক্তিগত মতামতে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। এতো বড় বিশাল অংকের অর্থ লেনদেনের জন্যে কোনো অর্থ সম্পাদক পদে কেউ না থাকা ছিলো চরম ঘাটতি। নিয়মমতে, অর্থের ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া উচিৎ ছিলো ঐ সময়ের প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম জনাব ছগীর মুহাম্মদ সাহেবকে। কেনো, সেটার বিশদ ব্যাখ্যা আছে এবং কারণও আছে।
২২. পরিশেষে একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি, “বিভিন্ন ধরনের স্বাধীনতার মধ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতাটি হচ্ছে শিক্ষক ও ছাত্রদেরসহ অনেকের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেবল এই স্বাধীনতার ক্ষেত্রেই কোন সীমা থাকার দরকার নেই। শিক্ষার কাজ হবে আমাদেরকে সত্যের যত কাছাকাছি সম্ভব নিয়ে যাওয়া যায়। এ উদ্দেশ্যে সত্যবাদিতা শেখাতে হবে।” উক্তিটি মনিষী বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতা’ নামক প্রবন্ধ থেকে।
পূনশ্চঃ অনিচ্ছা সত্বেও বিদ্যালয়ের অনেক প্রয়োজনীয় ইতিহাস আপাততঃ সংক্ষেপ করতে গিয়ে, আর কিছু অপ্রিয় সত্য প্রকাশ করায় ভুল বুঝার অবকাশ থাকতে পারে। যত কষ্টদায়ক ও দুঃখজনকই হোক না কেন, সে দায় ও জবাবদিহিতা লেখকের। লেখাটিতে, আগের লেখার তুলনায় অনেক কিছু তথ্য বাড়তি সংযোজন করা হয়েছে। আর এই লেখাটি স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক বাছাইকৃত ও নির্ধারিত হওয়ার পর এবং স্মারকগ্রন্থের সম্পূর্ণ ছাপানো ও বাধাই হয়ে যাওয়ার পর, এক বছর পরে প্রকাশের সময়ে বাদ দেওয়া হয়েছিলো জেনেটিক্ হীনমন্য চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে; যেভাবে বাদ দেয়া হয়েছিল বাছাইকৃত ও নির্ধারিত সম্পাদকীয় লেখাটি এবং সম্পাদক হিসেবে এস.কে.এম জাহাঙ্গীরের নাম। অন্যের প্রতি কষ্ট, শ্রম, যোগ্যতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মতো ব্যক্তিরা এবং যোগ্যরা দায়িত্ব পালন করলে এমনটা হওয়ার কথা নয়। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে সময় ও সুযোগে সব কিছু ভিতর বাহির প্রকাশ করা হবে, যেটা নব প্রজন্মের জন্য প্রয়োজনও বটে।
========সমাপ্ত========
• তথ্যসূত্রঃ১। স্কুল রেকর্ড২। ভারতবর্ষের ইতিহাসঃ কোলকাতা সংস্করণ৩। চট্টগ্রামের ইতিহাসঃ পূর্ণচন্দ্র চৌধুরী৪। রদ্দুরঃ সাময়িকী৫। বয়োজ্যেষ্ঠ প্রাক্তন ছাত্রগণের সাক্ষাৎকার।
লেখকঃ- স.ম ইউনুচ
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৭৫ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র
বিঃদ্রঃ
(লেখাটি আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন স্মারকগ্রন্থের জন্য প্রস্তুতকৃত ছিলো। অনেকগুলো তথ্য সম্পাদন করে নতুনভাবে প্রকাশ করা হলো। ইতিহাসের সত্য অস্বীকার করা যায় না। যে কারো মতামত গ্রহণযোগ্য। - লেখক)
আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্টবক্সে কিংবা মেসেজ করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে