ফিলিস্তিনের আল-আকসায় ফের ইসরায়েলি সন্ত্রাসী হামলা, আহত ৩১ |
ভয়েস অব পটিয়া-ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কঃ পবিত্র রমজান মাসে ফিলিস্তিনের পূর্ব জেরুজালেমের মসজিদুল আল-আকসায় আবারও হামলা চালিয়েছে অবৈধ দখলদার ইসরায়েলি সন্ত্রাসী বাহিনী।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) মসজিদটিতে জুমার নামাযরত অবস্থায় মুসলিমদের উপর বর্বর এ হামলা চালায় ইহুদি সন্ত্রাসবাদী ইসরায়েলি পুলিশ। এ সময় তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন সাংবাদিকসহ অন্তত ৩১ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বরাতে জানা যায়, শুক্রবার সকালে সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী কায়দায় আটঘাট বেঁধে রাবার বুলেট ছুড়ে হামলা করতে করতে আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করে দখলদার ইসরায়েলি পুলিশ। এ সময় ফিলিস্তিনিরা আত্মরক্ষার্থে পাথর ছুড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে অতর্কিতভাবে গুলি, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হামলা করে ইসরায়েলিরা।
সংঘর্ষ চলাকালে মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি গাছে আগুন জ্বালিয়ে দেয় সন্ত্রাসবাদী ইসরায়েলি বাহিনী।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, দখলদার ইসরায়েলি সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩১ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে নতুন করে অবৈধ দখলের উদ্দেশ্যে দখলদার ইসরায়েলিদের চালানো সামরিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান উত্তেজনার মধ্যে মুসলিমদের প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদ সম্প্রতি সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
গত ১৮ এপ্রিল জেনিন শহরের কাছে আল-ইয়ামুন এলাকায় দখলদার ইসরায়েলি সন্ত্রাসবাদী বাহিনীর গুলিতে গুরুতর আহত হয় ইব্রামিক লেবেদি নামের ২০ বছরের এক ফিলিস্তিনি কিশোর। চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শুক্রবার মৃত্যুবরণ করে ফিলিস্তিনি এ কিশোর।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভূমি অবৈধভাবে দখলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইহুদি সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে যুদ্ধে আল-আকসা মসজিদ দখল করে নেয় তারা। যুদ্ধের পর আল-আকসা মসজিদ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল অবৈধভাবে দখলদার ইসরায়েলিরা। এমনকি ১৯৬৯ সালে মুসলিমদের প্রথম কিবলা পবিত্র এ মসজিটিতে অগ্নিসংযোগও করেছিল তারা। এরপর নানা বিধিনিষেধ আর শর্তপূরণের মাধমে সেখানে ইবাদতের সুযোগ পেতেন সাধারণ মুসল্লিরা।
এরপরও একাধিকবার বিভিন্ন অজুহাতে দখলদার সন্ত্রাসবাদী ইসরায়েল আল-আকসা মসজিদটি ফিলিস্তিনিদের জন্য বন্ধ করে দেয়। ২০০৩ সালে ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের আল-আকসায় প্রবেশের অনুমতি দেয় দখলদার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে আবারও দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
মসজিদুল আল-আকসা বা বায়তুল মাকদিস মুসলিমদের প্রথম কেবলা। অসংখ্য নবী-রাসূলের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান ও মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতের জায়গা এটি। আল্লাহর রাসূল প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐতিহাসিক মেরাজের রাতে মসজিদুল হারাম তথা পবিত্র কাবা শরীফ থেকে মসজিদুল আল-আকসা তথা বায়তুল মাকদিসে প্রথম সফর করেন। সেখান থেকে বোরাকে চড়ে উর্ধ্বাকাশে গমন করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেন, যা মেরাজ নামে পরিচিত।
এদিকে ইহুদিরা মসজিদুল আল-আকসাকে তাদের টেম্পল মাউন্ট হিসেবে দাবি করে বলে, ‘এর নিচেই রয়েছে দুটি প্রাচীন ইহুদি মন্দির। অন্যদিকে খ্রিস্টানরাও স্থাপনাটিকে তাদের পবিত্র স্থান বলে দাবি করে আসছে।’ এই নিয়ে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর ইহুদি সন্ত্রাসবাদী অবৈধ দখলদার ইসরায়েলিরা যুগ যুগ ধরে হত্যা-দমন-পীড়ন বর্বরতা চালিয়ে আসছে।