অঝোর বর্ষণে চট্টগ্রামসহ পটিয়ার বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে |
ভয়েস অব পটিয়া-চট্টগ্রাম ডেস্ক: বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে রাতভর তুমুল বর্ষণের পর শনিবার (২৫ জুলাই) সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। টানা বর্ষণে নগরীর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
মহাসড়কে পানি উঠে আসায় চট্টগ্রামের সঙ্গে বান্দরবানের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উত্তর ফটিকছড়ির সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, পটিয়া, হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ির কমপক্ষে ৩০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ী ঢলের কারণে নদনদীর পানি বেড়ে গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। বানের পানিতে ঘরবাড়ি, সড়ক, ফসলি জমি ও চিংড়ি ঘের, গৃহপালিত পশুসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তলিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) রাত থেকে কখনও হালকা, কখনও মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে চট্টগ্রামসহ আশপাশের উপজেলাগুলো জুড়ে। শুক্রবারও দিনভর অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া তুমুল বর্ষণ চলছে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, ‘শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার ২৫৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় এবং সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে মাঝারি আকারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি আরও তিন-চারদিন থাকতে পারে।
ভারী বর্ষণের কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’
শুক্রবার রাতভর বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকার বাসা, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সড়ক পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সকালে কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি বন্ধ থাকে। এতে পানি কিছুটা নেমে গেলেও পরে আবারও টানা বর্ষণ শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে একটানা বর্ষণের কারণে আবারও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে নগরীর বেশকিছু নিচু এলাকায়।
নগরীর অক্সিজেন, হামজারবাগ, মুরাদপুর, আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, কাতালগঞ্জ, নাসিরাবাদ, বায়োজিদ, ষোলশহর, চকবাজার, পাঁচলাইশ, ডিসি রোড, খাজা রোড, চান্দগাঁও, মোহরা, বাকলিয়া, চাক্তাই, কোরবানিগঞ্জ, মাস্টারপুল, বৌ বাজার, মিয়াখান নগর, রাজাখালী, দেওয়ানবাজার, আগ্রাবাদ, ছোটপুল, বড়পুল, সিডিএ, হালিশহর, পাহাড়তলী, সরাইপাড়া, সাগরিকা, কাঁচারাস্তার মাথা ও পতেঙ্গার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
পানি ঢুকে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিসেও। বাসা-বাড়িতেও কোমর সমান পানি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রয়েছে বেচাকেনা। সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় লোকজন ভ্যান গাড়ি ও হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে।
পটিয়া উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের জুলধা, ডাঙ্গারচর ও বড় উঠান ইউনিয়নের বড় উঠান, দৌলতপুর ও শাহমীরপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামীণ সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, ‘টানা বৃষ্টিতে সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ ঘিরে থাকা শঙ্খ নদীর পানি বেড়ে গেছে। পাহাড়ী ঢলের কারণে সাতকানিয়ার বাজালিয়ায় চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়কে পানি উঠে গেছে। এতে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মহাসড়কে ছোট-বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।’
সাতকানিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার একেএম এমরান ভূঁইয়া বলেন, ‘মহাসড়কে পানি উঠে যাওয়ায় ছোট গাড়ি যেতে পারছেনা। বড় যানবাহনগুলোও বিপদের আশংকায় যাচ্ছেনা। তবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।
ভয়েস অব পটিয়া’র সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানান, সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বাজালিয়া, পূর্ব বাজালিয়া, বড় দুয়ারা, ঘিলাতলী, মাহালিয়া এলাকা পানিতে ডুবে আছে। এছাড়া চরতি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম পানির নিচে ডুবে আছে। এসব এলাকার সড়কগুলোও পানিতে ডুবে গেছে। নলুয়া ইউনিয়নের চারটি গ্রাম ও আমিলাইশ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের লোকজনও পানিবন্দী রয়েছে।
লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া, আমিরাবাদ ও সদরের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার সড়ক ও ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।
বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল, বাহারছড়া, চাম্বল, গন্ডামারা, খানখানাবাদ এসব ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইচ গেইটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ আহমেদ খান বলেন, ‘ভারী বর্ষণ এবং জোয়ারের সময় উপজেলা পরিষদেও পানি ঢুকে গিয়েছিল। জরুরীভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইচ গেইটগুলো খুলে দিয়েছি। সাগরের পানি ঢুকে মাছের ঘের, পুকুর ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর, জুইদণ্ডী, বরুমচড়া এলাকায়ও পানি উঠেছে। তবে শঙ্খ নদী ও উপকূলীয় এলাকার লোকজন বেশি দুর্ভোগে পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ইউনিয়নের চাগাচর দিয়াকুল, নয়াপাড়া, রায়জোয়ারা, কিল্লাপাড়া ও বৈলতলী ইউনিয়নে দু’টি গ্রামের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে ডুবে গেছে।
চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজীদা শারমিন বলেন, ‘শঙ্খ নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়া এবং পাহাড়ী ঢলের জন্য কয়েকটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
হাটহাজারী উপজেলার ফরহদাবাদ, ধলই, নাঙ্গলমোড়া, গুমানমর্দন, মেখল, শিকারপুর ও আলমপুর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কুলপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘ভারী বর্ষণের কারণে উত্তর রাউজানের হলদিয়া ও ডাবুয়া এলাকায় পাহাড় থেকে ঢেল নেমে এসেছে। এতে পৌরসভাসহ আশপাশের এলাকার ৬০ শতাংশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফসলের ক্ষেতও তলিয়ে গেছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, ‘উত্তর ফটিকছড়ির নারায়নহাট, ভুজপুর ও পাইন্দং ইউনিয়নের ২০ থেকে ২৫ টি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। প্রধান সড়কের সাথে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে বলে তিনি জানান।’