লবণ পানিতে পিচ্ছিল চট্টগ্রাম-পটিয়া-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ |
ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্কঃ লবণ পানিতে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া অংশ। প্রতিদিন কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পানিযুক্ত অপরিশোধিত লবণ আনলোড করা হয় পটিয়ার ইন্দ্রপুল শিল্প এলাকায়। যার ফলে অপরিশোধিত লবণ থেকে ঝরে পড়া পানি পিচ্ছিল করে তুলছে ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকা সংলগ্ন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অংশের উভয় পাশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ। গত এক বছরে প্রায় ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। যাদের বেশিরভাগই ছিল মোটরসাইকেল আরোহী।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, লবণ থেকে ঝরে পড়া পানিতে এত দুর্ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে এখনো পর্যন্ত প্রশাসন থেকে তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে লক্ষ্য করা যায় নি।
অপরদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পলিথিন দিয়ে লবণ পরিবহনের জন্য বার বার অবহিত করা হলেও তাতে কর্ণপাত করছে না লবণ ব্যবসায়ীরা। অনেক লবণ পরিবহনকারী ট্রাকে পলিথিন ব্যবহার করলেও ইন্দ্রপুল এলাকায় সড়কের উপর লবণ আনলোড করার সময় লবণাক্ত পানিতে সয়লাব হয়ে যায় মহাসড়ক।
এদিকে পানিযুক্ত লবণ পরিবহনের ফলে মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত এবং পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণে গত জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম জেলার উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে পানিযুক্ত লবণ পরিবহনের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লবণ ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় করা হবে।
এদিকে মহাসড়কের পাশে পানিযুক্ত লবণ আনলোড বন্ধে মিল মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছে পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতি। তা সত্বেও সড়কের উপর লবণ আনলোড বন্ধ করেনি কেউ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পটিয়া লবণ শিল্প এলাকায় চাঁনখালী খাল দিয়ে লবণ বোঝাই ট্রলার আসা কমে গেলে ট্রাকে লবণ পরিবহন বেড়ে যায়। বিগত ১০ বছর ধরে ট্রাকে করে লবণ পরিবহন করা হলেও এতে কোন পলিথিন ব্যবহার করা হতো না। সম্প্রতি কিছু কিছু লবণ পরিবহনকারী পলিথিন ব্যবহার শুরু করলেও এতে তেমন একটা উন্নতি পরিলক্ষিত হয় নি।
কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, চকরিয়া ও বাঁশখালী থেকে সড়ক পথে আসা ট্রাক থেকে লবণ আনলোড করার সময় ঝরে পড়া লবণের পানিতে ইন্দ্রপুল মহাসড়ক এলাকা সয়লাব হয়ে যায়। এসব ঝরে পড়া লবণাক্ত পানির ফলে, পটিয়া থানার মোড় হতে আমজুর হাট পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে গত এক বছরে অসংখ্য দুর্ঘটনায় ১০ জনের প্রাণহানিসহ শতাধিক লোক আহত হয়।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের (দোহাজারী) নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান ভয়েস অব পটিয়া’কে জানান, ‘পানিযুক্ত লবণ পরিবহন বন্ধ করতে জানুয়ারি মাসের জেলা উন্নয়ন সভায় পানিযুক্ত লবণ পরিবহনের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক আল্লাই ভয়েস অব পটিয়া’কে বলেন, ‘মহাসড়কের উপর যারা পানিযুক্ত লবণ আনলোড করেন তাদেরকে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে মহাসড়কের উপর লবণ আনলোড বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আমরা পুনরায় ওইসব মিল মালিকদের আবারো সতর্ক করব; অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান ভয়েস অব পটিয়া’কে বলেন, ‘বিষয়টি অতিব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শীঘ্রই এ ব্যাপারে লবণ মালিকদের সাথে আলোচনায় বসব। তবে যারা সড়কের পাশে লবণ আনলোড করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’