পটিয়ায় ছাত্রজনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণ, ২ মাসেও ধরা পড়েনি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা |
ভয়েস অব পটিয়া-নিউজ ডেস্কঃ স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন গত ০৪ আগস্ট পটিয়া উপজেলা পরিষদের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার দুই মাস পার হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। চিহ্নিত হয়নি ঘটনার দিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া সদরে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হেলমেটধারী আওয়ামীলীগ দলীয় অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীরা। উদ্ধার হয়নি কোনো অস্ত্রও।
স্থানীয়রা জানান, গত ০৪ আগস্ট পটিয়া পৌর সদরের মুন্সেফ বাজার থেকে উপজেলা পরিষদের সম্মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা। এতে গুলিবিদ্ধ হন ৫০ জনেরও বেশি ছাত্র-জনতা; আহত হন প্রায় ২৫০ জন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন আল জামিয়া পটিয়া কওমী মাদ্রাসার ছাত্র। পরে ছাত্র-জনতা ধাওয়া দিলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সন্ত্রাসীরা।
গুলিবর্ষণকারী সন্ত্রাসীরা পটিয়ার সাবেক দুই এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী-সামশুল হক চৌধুরী-অপসারিত মেয়র আইয়ুব বাবুলের অনুসারী। তাদের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজীসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
গত ০৪ আগস্টের গুলিবর্ষণের ঘটনায় পটিয়া থানায় হওয়া পৃথক দুটি মামলায় ২২৬ জনের নাম উল্লেখসহ ৮৭৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। ১৯ আগস্ট আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসার ছাত্র নুরুল হাসান বাদী হয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ২৭ আগস্ট রাতে অপর আরেকটি মামলা করেন শিবির কর্মী এনামুর রশিদ। এ ছাড়া বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী দলীয় অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় ২০ আগস্ট ৭৫ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেন পটিয়া থানায়।
অস্ত্রধারী কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার না করা নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী নুরুল হাসান। তিনি বলেন, 'প্রকাশ্যে সাবেক এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী-সামশুল হক চৌধুরী-অপসারিত মেয়র আইয়ুব বাবুলের অনুসারীরা ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিল লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজে অস্ত্রধারীদের দেখা গেছে, সেটি আমরা পুলিশকে দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করছে না। উদ্ধার হয়নি অবৈধ অস্ত্রও। অথচ এখন আওয়ামীলীগের এসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন পেশায়-বিভিন্ন দলের ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রকাশ্যে পটিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে সমন্বয়কের বেশে মিশে গেছে ছাত্রজনতার মধ্যে।’
পটিয়ার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংগঠক কাসেম আল নাহিয়ান বলেন, ‘অস্ত্রধারী আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা আতঙ্কিত। দ্রুত অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এ বিষয়ে পটিয়া থানা পুলিশ বলছে, ‘গ্রেপ্তার এড়াতে পটিয়ার সাবেক এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।’
পটিয়া থানার নবাগত ওসি আবু জায়েদ মুহাম্মদ নাজমুন নুর বলেন, ‘হেলমেট পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ওই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত এবং পরিকল্পনাকারী, সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’
পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা ০৪ আগস্টের ঘটনার দিন অস্ত্র ব্যবহারের একটি ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি।
সেটি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। ইতোমধ্যে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা তা খতিয়ে দেখছি। সেই অস্ত্রগুলো বৈধ না অবৈধ, সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে।'